নাজমুল হাসান নিরব, ফরিদপুর প্রতিনিধি:
ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় প্রশাসনিক অভিযানের পর নদ-নদীতে বালু উত্তোলন বন্ধ হলেও এখন তিন ফসলি (বছরে তিনবার ফসল উৎপাদন হয়) জমিগুলোতে হানা দিচ্ছে মাটিখেকোরা। বর্ষা মৌসুমকে টার্গেট করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নিচু জমির জলাশয়ে বসানো হচ্ছে অবৈধ ড্রেজার মেশিন। এতে ভয়াবহ হারে বেড়েছে বালু উত্তোলনের তৎপরতা।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও উর্বর কৃষিজমির জন্য খ্যাত সালথা উপজেলায় প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীরা দিনের পর দিন ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় আশপাশের কৃষিজমি ভেঙে পড়ছে।
ড্রেজারের বিকট শব্দে শিশু ও বৃদ্ধদের স্বাভাবিক জীবনযাপন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় অব্যাহত এই অবৈধ ড্রেজিং কার্যক্রম নিয়ে কেউ প্রকাশ্যে কথা বলার সাহস পায় না।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের কুষ্টিয়ার চকে স্থানীয় দেলোয়ার হোসেন নামে এক মাটি ব্যবসায়ী একটি বড় ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে বালু উত্তোলন করছেন। একই এলাকায় রিয়াজ হোসেন নামে আরেক ব্যক্তি ড্রেজার স্থাপন করছেন।
এ ছাড়া, গট্টি ইউনিয়নের ভাবুকদিয়া বিল ও আগুলদিয়া দীঘের বিলের ফসলি জমিতে মিজান ও মাহমুদ নামে আরও দুই ব্যবসায়ী ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছেন। উপজেলাজুড়ে তিন ফসলি জমি থেকে এ ধরনের বালু উত্তোলনের একাধিক ঘটনা শোনা যাচ্ছে।
উপজেলায় দেলোয়ার, মিজান ও মাহমুদসহ আরও কয়েকজন চিহ্নিত মাটি ও বালু ব্যবসায়ী রয়েছেন, যারা মূলত এই অবৈধ কাজকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। নদী, খাল-বিল কিংবা ফসলি জমি—যেখানেই সম্ভব, সেখান থেকেই মাটি ও বালু উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তারা।
তাদের ভয়াল থাবার শিকার হয় নিরীহ কৃষকরা।। স্থানীয় কৃষকরা জানান, প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকায় জমির অংশ ভেঙে যাচ্ছে। ফলে তাদের ফসল চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
আটঘর ইউনিয়নের কৃষক জব্বার মোল্যা বলেন, “আমার দাদা-পরদাদার আমলের কৃষিজমি এখন বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কিছু বললে হুমকি দেওয়া হয়। আমরা অসহায়। প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি, দ্রুত এই অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করা হোক এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
বালু ব্যবসায়ী মাহমুদ, মিজান ও দেলোয়ার বলেন, “আমরা সবাইকে ম্যানেজ করেই ব্যবসা করি। কৃষিজমির ক্ষতি হলেও আমাদের কিছু করার নেই। জমির মালিকরাই আমাদের কাছে মাটি বিক্রি করেন। আমরা সেই মাটি ইটভাটা ও অন্যান্য স্থানে বিক্রি করি।”
সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বালী বলেন, “তিন ফসলি জমি থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। যেহেতু অভিযোগ এসেছে, দ্রুতই অভিযান পরিচালনা করা হবে।”
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরেই সালথা উপজেলার বিভিন্ন নদ-নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছিল বিভিন্ন চক্র। গণমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিক অভিযান পরিচালনা করা হয়। এরপর থেকে ওইসব চক্র এখন ফসলি জমিকে টার্গেট করে চলছে অবৈধ মাটি উত্তোলন কার্যক্রম।